বাল্যবিবাহের অপূরণীয় ক্ষতি
October 5 , 2022
My Life
11 Comments
সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত সরাসরি সরকারী ওয়েবসাইটে এই ফতোয়া পরিষ্কারভাবে দেয়া হয়েছে যে, বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ হালাল, সহবাসও হালাল এবং তা শুধু নবীর জন্যেই নয়, সকলের জন্যেই হালাল।
বাস্তবে আমাদের দেশে কোনো কোনো শিশুর এতো অল্প বয়সে বিয়ে হয় যখন তাদের কাছে বিয়ের অর্থই পরিষ্কার থাকে না। শারীরিক ও মানসিক পূর্ণতাপ্রাপ্তির আগেই বাল্যবিবাহের শিকার হয় বিশেষ করে মেয়েরা। বিয়ের পরই স্বামী ও অন্যরা সন্তানের মুখ দেখতে চায়। এক বা দুই বছরের মধ্যে সন্তান না হলে স্বামী যদি বংশরক্ষার জন্য আবার বিয়ে করে ফেলে, সে জন্য মেয়ের বাড়ি থেকেও সন্তান নেওয়ার জন্য মেয়েটিকে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু এই অপুষ্ট মা কম ওজনের সন্তানের জন্ম দেয়। নবজাতক মারা যায়। মারা না গেলেও মা ও সন্তানের অসুখ লেগেই থাকে। চিকিৎসার খরচ, পরিবারের লোকজনের কাজ কামাই দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি শুরু হয়। এতে নেতিবাচক অবস্থা চলতেই থাকে পরিবারটিতে।
এই বাল্যবিবাহের প্রধান কারণ হলো দারিদ্রতা। এছাড়াও এই বাল্যবিবাহের অন্যান্য কারণ রয়েছে যেমন যৌতুক, ধর্মীয় সামাজিক চাপ, বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার এবং সব থেকে বড় কারণ হলো শিক্ষার অভাব। আমার তো মনে হয় শিক্ষার অভাবেই সবথেকে বেশি বাল্যবিবাহ হয়। আবার কিছু কিছু ব্যক্তি আছে যারা অর্থের লোভে তাদের সন্তানের বিয়ে দিয়ে দেন। যারা বাল্য বিবাহে ইচ্ছুক তারা যে কোন উপায়ে জন্ম নিবন্ধনে মেয়ের বয়স টাকার বিনিময়ে বৃদ্ধি করে নেয় ।এর ফলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে । এক্ষেত্রে কিছু কাজীও দায়ী থাকে এবং এরা মেয়ের বয়স বৃদ্ধি দেখিয়ে বিয়ে দিতে বর এবং কনে পক্ষকে সহায়তা করে। সাধারনত মেয়েদের অর্থনৈতিক অবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাল্যবিবাহে উৎসাহিত করে ছেলেদের পরিবার।
ইসলামে প্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়ের বিবাহের সময় মেয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়। অপ্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়ের বিয়ে পিতা বা অভিভাবক চাইলেই দিতে পারেন, কন্যার তাতে সম্মতি থাকুক কিংবা না থাকুক। কোরআন, হাদীস অথবা প্রাচীন আলেমদের বক্তব্যে এমন কোনো নিষেধাজ্ঞার কথা পাওয়া যায়না। বরং দেখা যায় যে অপ্রাপ্তবয়স্ক যৌনদাসীদের সাথে সঙ্গম করা তাদের কাছে সাধারণ ঘটনা ছিল
স্বামী, সংসার, শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে বুঝে উঠার আগেই সংসার এবং পরিবারের ভারে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির থেকেও তার উপর চাপের সৃষ্টি হয়, শুরু হয় অশান্তি, পারিবারিক কলহ, এবং সর্বোপরি পারিবারিক নির্যাতন। এই পারিবারিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিকার হয় পরিবারের সবাই, বিশেষ করে শিশুরা ভোগে নানা মানসিক অশান্তিতে ।এতে তাড়া লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়, পরিবারের প্রতি জন্মে নানারকম অনীহা, ফলে তাড়া পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নানারকম অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে।
বাল্য বিবাহের শিকার ছেলে ও মেয়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদনের মত মৌলিক মানবাধিকার লংঘিত হয়, যা তাঁকে তার সারাজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ করে। বাল্য বিবাহ বর ও কনেকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়।
মা যদি কম বয়সী তথা আঠারো বছরের কম হয়, তখন তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণ হয় না। শারীরিক ও মানসিকভাবে তখন সে চাপ কিশোরী নিতে পারে না। তখন সে ডিপ্রেশনে ভোগে। অবসাদগ্রস্ত হয়। মানসিক সুস্থতার অভাবে সে নানা চিন্তা করতে থাকে, যার প্রভাব তার শরীরের পড়ে। আর কিশোরী বয়সে যদি সে মা হতে যায়, তাহলেও স্বাস্থ্যের উপর নানা প্রভাব পড়ে। যেমন উচ্চ রক্তচাপ,অপরিপক্ব সন্তান জন্ম হওয়া,গর্ভে শিশু ভালো ভাবে বেড়ে না ওঠায় কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে। এতে গর্ভপাতের সম্ভাবনাও থাকে।তখন সে অবস্থায় যদি মা হয় তাহলে মা ও নবজাতক শিশুর উপর প্রভাব পড়ে।
অনেক সময় সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করতে হয়। তখন সেই কিশোরী মায়ের মনে নানা প্রশ্ন আসে। প্রথম বাচ্চা যদি সিজারের মাধ্যমে হয়, তাহলে সারা জীবনের জন্য সেটা তার জন্য একটা বোঝা হয়। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, কম বয়সী মায়ের মৃত্যুহারও বেড়ে যায়। আবার নবজাতকের মৃত্যুর হারও বাড়ে।
11 Comments
আয়াত শিউলী 22 Oct 2022
আসলে বাল্যবিবাহ বেশির ভাগ নিরক্ষর লোকের হয়ে থাকে। তাছাড়া দরিদ্র বাবা-মা তার সন্তানকে ভরণ পোষণ করতে পারে না সেই ক্ষেত্রে তারা তাড়াতাড়ি তাদের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়। এই প্রতিফল যখন বিপদ ঘটে তখন তারা সেই জিনিস অনুভব করতে পারে । তবে সবাই মিলে এর প্রতিকার করলে হয়তো রোধ করা সম্ভব। ধন্যবাদ আপনাকে।
আবুল সিরাজুল 29 Oct 2022
চমৎকার লিখেছেন। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল; পরবর্তী প্রজন্মের মেহতাব খানম, সারা যাকেরকে এই জাতি পেয়ে গেছে। শতাধিক প্লাস। অসাধারণ, অসাধারণ।
জেসিকা রাবেয়া 12 Nov 2022
আপনি আবারও নবী রাসূলকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু
উম্মে আরিফা 29 Nov 2022
আপনার লেখাটি ভাল হয়েছে। সুন্দর বিশ্লেষণ।
মিজানুর 30 Nov 2022
কিছু মানুষ আছে যারা শুধু লেখা পড়ে .....
ভালো হোক আর খারাপ হোক কোন কমেন্ট করে না .।
ভালো হলে ধন্যবাদ দেয় না আর খারপ হলেও সমালোচনা করে না........
আমি হলাম সেই কোয়ালিটির পাঠক .।
……………….. এক কথায় বলতে পারেন কমেন্ট কৃপণ লোক .।
বিশ্বাস কালাম 16 Dec 2022
আপনার লেখা পড়ে এতো ভালো লেগেছে যে কমেন্ট করতে বাধ্য হলাম .।
আহসান সোহেল 30 Dec 2022
আপনার এই লেখাটা কে কতটুকু বুঝতে পেরেছে আমি জানি না .। আমি যা বুঝেছি তা হলো বর্তমান ও ভবিষ্যতে প্রজন্মের জন্য খুব গুরুত্ব পূর্ণ একটি লেখা .।
আক্তার মনিরা 10 Feb 2023
শুধু লিখলেই হবে না, অন্যদের লেখা পড়তে হবে, কমেন্ট করতে হবে। তাহলে দেখবেন নতুন নতুন আইডিয়া পাবেন।
আলম 25 Feb 2023
জনকল্যাণ মূলক পোস্ট
তাসনিম সামছুন 28 Feb 2023
খুবই ভাল, উন্নত লেখা 🙃
বৃষ্টি হাবিবা 01 May 2023
ব্যাপুক চিন্তার বিষয়য়। ভাবতাছি।